নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, ইসরায়েল, আন্তর্জাতিক : নিশানা ছিল গাজ়া, কিন্তু ‘সেমসাইড’ করে বসলো ইজ়রায়েলি বিমানবাহিনী! হামাসের উপর আক্রমণ চালাতে গিয়ে বুধবার সকালে ভুলবশত ইজ়রায়েলি যুদ্ধবিমান নিজের দেশের ইহুদি জনবসতির উপরই বোমা ফেলে। এই ঘটনায় তৎক্ষণাৎ ব্যাখ্যা দেয় ইজ়রায়েলের সেনাবাহিনী (আইডিএফ)। তাদের দাবি, প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণেই গাজ়া সীমান্ত থেকে মাত্র দু’কিলোমিটার দূরে ইতজ়াক এলাকায় ইজ়রায়েলি ভূখণ্ডে ওই বোমা ফেলা হয়।
আকর্ষণীয়ভাবে, এই ঘটনার দিনই গাজ়া সফরে যান প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ওই দিনই আরও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেন ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইজ়রায়েল কাৎজ়—যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গাজ়ার শরণার্থী শিবিরগুলিতে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ প্যালেস্টাইনিদের জন্য আর কোনও আন্তর্জাতিক মানবিক সাহায্য পাঠাতে দেওয়া হবে না। তাঁর কথায়, ‘‘হামাসের উপরে চাপ সৃষ্টি করতেই এই সিদ্ধান্ত।’’
তবে সেনা অভিযান নিয়ে কিছুটা সতর্ক বার্তাও দিয়েছেন তিনি, বলেছেন গাজ়ায় মোতায়েন সেনাবাহিনীর চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখা হবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক হামলার পর গাজ়ায় ব্যাপক হামলা চালায় ইজ়রায়েলি বাহিনী। প্রথমে উত্তর গাজ়া খালি করে, পরে স্থল অভিযানে মধ্য গাজ়া দখল করে নেয়। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ঘরবাড়ি, হাসপাতাল, বেসরকারি স্থাপনা। দক্ষিণের খান ইউনিসেও চলে টানা হামলা।
এ বার নেতানিয়াহুর লক্ষ্য গাজ়ার একেবারে দক্ষিণ প্রান্ত—রাফা। সেখান থেকে সাধারণ মানুষদের সরে যাওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সেনা অভিযান শুরু হলে, প্রচুর প্যালেস্টাইনির হতাহতের আশঙ্কা রয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে, চলতি সপ্তাহে নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেয় ইজ়রায়েল। তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাস যদি ১০ জন ইজ়রায়েলি পণবন্দিকে মুক্তি দেয়, তবে তেল আভিভ কয়েকশো প্যালেস্টাইনি বন্দিকে ছেড়ে দেবে এবং পরবর্তী ৪৫ দিনের জন্য গাজ়ায় হামলা বন্ধ থাকবে।
হামাস জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবটি বিবেচনা করছে। তাদের এক কমান্ডারের দাবি, যুদ্ধবিরতির প্রথম দিন মার্কিন-ইজ়রায়েলি নাগরিক ইদান আলেকজান্ডারকে ‘আমেরিকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে’ মুক্তি দেওয়া হবে। এরপর আরও ৯ জন ইজ়রায়েলি পণবন্দি ধাপে ধাপে মুক্তি পাবে। পাল্টা ইজ়রায়েল যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ১২০ জন ও ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে অভিযোগ ছাড়া আটক ১,১০০-র বেশি প্যালেস্টাইনি বন্দিকে মুক্তি দিতে পারে।
উল্লেখ্য, কাতারের মধ্যস্থতায় এবং আমেরিকা ও মিশরের উদ্যোগে গত ১৫ জানুয়ারি যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল ইজ়রায়েল ও হামাস। ১৯ জানুয়ারি থেকে কার্যকর হলেও, মার্চের গোড়ায় ইজ়রায়েল একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ভেঙে ফের গাজ়ায় আক্রমণ শুরু করে। যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব আসার পরেও হামলার ধারাবাহিকতা থেমে নেই।