নতুন পম্বন সেতুর উদ্বোধন হয়ে গেছে। সাগরের বুকে ট্রেন চলার সেই অনন্য মুহূর্তের সাক্ষী হতে ঘুরে আসতে পারেন রামেশ্বরম।

নতুন পম্বন সেতুর উদ্বোধন হয়ে গেছে। সাগরের বুকে ট্রেন চলার সেই অনন্য মুহূর্তের সাক্ষী হতে ঘুরে আসতে পারেন রামেশ্বরম।

Spread the love

নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, ভ্ৰমণ, ভারত : সমুদ্র নয়, সাগরের বুক চিরে ছুটছে ট্রেন – নতুন পামবন সেতুর জাদু

সাগরের ধারে নয়, একেবারে জলরাশির বুকে তৈরি হয়েছে নতুন এক রেলসেতু। তার উপর দিয়েই ছুটে চলেছে ট্রেন। গত কয়েক দিনে সেই দৃশ্য ভাইরাল হয়েছে সমাজমাধ্যমে—ছবি, ভিডিও ঘুরছে হু হু করে। আলোচনার কেন্দ্রে এখন নতুন পামবন সেতু।

মাত্র তিন দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী উদ্বোধন করেছেন নবনির্মিত এই সেতুর। ভারতীয় উপমহাদেশের মূলভূমি থেকে রামেশ্বরম দ্বীপে পৌঁছাতে এই রেলসেতু এখন অমূল্য সম্পদ।

১৯১৪ সালে ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল পুরনো পামবন সেতু। তবে বছরের পর বছর ধরে সামুদ্রিক ঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ২০২২ সাল থেকে সেখান দিয়ে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। এখন সেই পুরনো সেতুর পাশেই ৫৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নির্মিত নতুন পামবন সেতু। বিশেষত্ব? জাহাজ চলাচলের জন্য সেতুর ৭২ মিটার অংশ উল্লম্বভাবে উপরের দিকে তোলা যাবে!

গাড়ি চলাচলের সেতু সাগরের উপর অনেক দেখা যায়, কিন্তু ট্রেনে এমন অভিজ্ঞতা একেবারেই আলাদা। রামেশ্বরম-তম্বরম (চেন্নাই) এক্সপ্রেস এখন থেকে চলবে এই নতুন সেতুর উপর দিয়ে। এই অভিনব যাত্রার সাক্ষী হতে চাইলে ভ্রমণ তালিকায় অবশ্যই যোগ করতে পারেন রামেশ্বরমকে।

রামেশ্বরমে দেখার মতো কিছু জায়গা

👉 রামনাথস্বামী মন্দির
রামেশ্বরম শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত এই মন্দির একাধিক কারণে দর্শনীয়। দক্ষিণ ভারতীয় স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত মন্দিরটির অলিন্দে রয়েছে প্রায় এক হাজার স্তম্ভ। রামায়ণের কাহিনি অনুযায়ী, লঙ্কা জয়ের পর রাম এখানে শিবের আরাধনা করেছিলেন। এটি দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম। মন্দিরের সুউচ্চ চূড়া বহু দূর থেকেও দেখা যায়। সামনে বিস্তৃত সমুদ্র—যেখানে পুণ্যার্থীরা স্নান সেরে শিবপূজা করেন।

👉 ধনুষ্কোডি
রামেশ্বরম থেকে প্রায় ১৯ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই জায়গাটি যেন স্বর্গের পথ। দুই পাশে নীল জলরাশি আর মাঝখানে সরু রাস্তা। কথিত আছে, এখান থেকেই রাম সেতু তৈরি করে লঙ্কায় পাড়ি দেন। আকাশ পরিষ্কার থাকলে শ্রীলঙ্কার মান্নার দ্বীপ দেখা যায় বলেও অনেকে বিশ্বাস করেন।

👉 গন্ধমাদন পর্বত
রামায়ণের গন্ধমাদন পর্বতের সঙ্গে নাম মেলে এই ছোট্ট পাহাড়ের। বিশ্বাস করা হয়, এখান থেকেই রামের বানরসেনা সাগরের উপর পাথর ভাসিয়ে সেতু তৈরি করেছিল। রামেশ্বরমের কিছু মন্দিরে আজও এমন পাথর রয়েছে, যা জলে ফেললেও ডোবে না।

👉 পঞ্চমুখী হনুমান মন্দির ও লক্ষণ তীর্থ
রামায়ণপ্রেমীদের জন্য রামেশ্বরম এক ঐতিহাসিক ভ্রমণক্ষেত্র। এখানে রয়েছে একাধিক মন্দির, তীর্থস্থান ও পুরাণঘটিত স্থলচিহ্ন।

👉 এপিজে আব্দুল কালাম মেমোরিয়াল
ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এবং ‘মিসাইল ম্যান’ এপিজে আব্দুল কালামের শৈশব কেটেছে এই শহরেই। তাঁর স্মৃতিতে এখানে গড়ে উঠেছে একটি সংগ্রহশালা, যা পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত।

কীভাবে যাবেন?
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, নতুন পামবন সেতুর উপর দিয়ে চলাচলের জন্য ১৫ জোড়া ট্রেন নির্ধারিত হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে রামেশ্বরম-তম্বরম (চেন্নাই) এক্সপ্রেস। এছাড়াও প্রতিদিন ছ’টি ট্রেন চলবে এই পথে। চেন্নাই এগমোর থেকে একাধিক মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেন ছাড়াও মাদুরাই, তিরুপতি, কন্যাকুমারী, অযোধ্যা, কোয়েম্বাটুর, বারাণসী প্রভৃতি স্থান থেকেও ট্রেন চালু করা হচ্ছে।

কোথায় থাকবেন?
রামেশ্বরমে বিভিন্ন রকমের হোটেল ও লজ রয়েছে—বাজেট ফ্রেন্ডলি থেকে বিলাসবহুল, সবই মিলবে।

কীভাবে পৌঁছবেন?
চেন্নাই বা মাদুরাই থেকে ট্রেনে বা সড়কপথে রামেশ্বরম যাওয়া যায়। মাদুরাই থেকে গাড়িতে ৩-৪ ঘণ্টার পথ।


বলতে গেলে, ধর্ম, ইতিহাস আর প্রকৃতির এক অপূর্ব মিলনস্থল রামেশ্বরম—আর সেই অভিজ্ঞতাকে আরও ঐতিহাসিক করে তুলেছে নতুন পামবন সেতু।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *