বর বলছেন, ‘ফুচকা খাওয়াতে বা শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারব না’, আর বৌয়ের জবাব, ‘তাহলে দিলীপদা’ মুছে দিয়ে ‘হাজব্যান্ড’ নামে সেভ করব  নম্বরটা!

বর বলছেন, ‘ফুচকা খাওয়াতে বা শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারব না’, আর বৌয়ের জবাব, ‘তাহলে দিলীপদা’ মুছে দিয়ে ‘হাজব্যান্ড’ নামে সেভ করব নম্বরটা!

Spread the love

নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ: দিলীপ ঘোষের সঙ্গে চার হাত এক, সাজঘরেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি রিঙ্কু

শুক্রবার বিকেল ৪টা ১৫। নিউ টাউনের একটি শপিং মলের বিউটি পার্লারে কনের সাজ চলছে জোর কদমে। মুখের সাজ শেষ, এবার শুরু হয়েছে চুলের কাজ। কিন্তু বিশ্রামের ফুরসত নেই রিঙ্কু মজুমদারের! চারপাশে সাংবাদিকদের ভিড়, কৌতূহলী প্রশ্ন একের পর এক ছুটে আসছে তাঁর দিকে।

কারণ, শুক্রবার বিকেল ৫টা ৩০ মিনিটে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে চলেছেন বাংলার রাজনীতির অন্যতম আলোচিত মুখ, বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের সঙ্গে।

সাজগোজের ফাঁকে চোখ বন্ধ করেই প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন রিঙ্কু— ‘‘উনি (দিলীপ) আগেই বলে দিয়েছেন, শপিং করাতে বা ফুচকা খাওয়াতে নিয়ে যাওয়ার আশা না করাই ভালো। আমি বলেছি ঠিক আছে। তবে একজন স্ত্রী হিসাবে আমার সব দায়িত্ব পালন করব।’’

নিজের ফোনে এতদিন ‘দিলীপদা’ নামে সেভ করা ছিলেন হবু স্বামীর নাম। বিয়ের পরেও কি তাই থাকবে? হেসে রিঙ্কু বললেন, ‘‘না, এ বার ‘হাজ়ব্যান্ড’ নামে সেভ করব।’’

মধুচন্দ্রিমা নিয়েও মুখ খুলেছেন রিঙ্কু। জানালেন, পাহাড় তাঁর ভীষণ প্রিয়। নিরিবিলি কোনও পাহাড়ি জায়গায় যেতে চান। প্রাথমিকভাবে শিমলার কথা ভাবা হলেও এখনো চূড়ান্ত কিছু হয়নি। রিঙ্কুর কথায়, ‘‘যেখানেই উনি যান, লোক জড়ো হয়ে যায়। তাই চাইছি একটু নির্জন কোথাও যাওয়া।’’

বিয়ের অনুষ্ঠান একেবারেই ঘরোয়া, অনাড়ম্বর। খুব কাছের কয়েকজন আমন্ত্রিত। সাজসজ্জা শেষ করে বিকেল পৌনে ৫টা নাগাদ বাড়ি ফিরে শাড়ি পরে বিয়ের আসরে আসবেন রিঙ্কু। সাধারণ লাল-সাদা শাড়িই তাঁর বিয়ের পোশাক।

দিলীপ ঘোষ বিয়েতে কোনও ঢাকঢোল করতে চান না, কারণ তিনি নিজে আড়ম্বরে বিশ্বাসী নন। বিয়ের পরেও তাঁর রাজনৈতিক কর্মসূচিতে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না। শনিবার ভোরে প্রতিদিনের মতো প্রাতঃভ্রমণে বের হবেন নিউ টাউনে, যদিও নববধূ রিঙ্কু তখন বাড়িতেই থাকবেন, রীতিনীতি মেনে।

আবার এ দিনই দিলীপের জন্মদিনও। প্রাতঃভ্রমণ সঙ্গীরা হয়তো সকালেই তাঁর জন্মদিনের ছোটখাটো উদ্‌যাপন করবেন। এরপর দমদমে তাঁর একটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতেও অংশ নেবেন তিনি।

বিয়ের ঘণ্টাখানেক আগে রিঙ্কুর মধ্যে খানিক স্নায়ুচাপও দেখা দেয়। সাজতে সাজতেই বলেন, ‘‘আমার প্যালপিটেশন হচ্ছে। কী যে হচ্ছে, বুঝতে পারছি না। যেন একধরনের ফ্লোতে আছি।’’

বিয়ের দিনেও অকপটে নিজের কথা বলেছেন রিঙ্কু। তিনি একজন বিবাহবিচ্ছিন্না। সূত্রের খবর, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর মানসিক দিক থেকে কিছুটা ভেঙে পড়েছিলেন দিলীপ। তখনই রিঙ্কুই প্রথম একসঙ্গে থাকার প্রস্তাব দেন।

রিঙ্কু জানান, ‘‘আমি ফোনে যা বলার বলেছিলাম। ও শুনেছিলেন। আমার মনে হয়েছিল, উনি রাজি হবেন। তবে তিন মাস সময় নিয়েছিলেন। সেসময় আমরা অনেক কথা বলেছি। আমি খুব খোলামেলা মানুষ, ও সেটাও বুঝেছেন। বিয়ের পরেও আমি রাজনীতিতে থাকব, কেউ কারও কাজে হস্তক্ষেপ করব না।’’

এই বিশেষ দিনে সৌজন্যতা দেখিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। শুভেচ্ছাবার্তা ও একটি ফুলের তোড়া পাঠিয়েছেন দিলীপ ঘোষের নিউ টাউনের বাড়িতে। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি লিখেছেন:
“শ্রীমতি রিঙ্কু মজুমদারের সঙ্গে আপনার বিবাহবন্ধনের কথা জেনে আনন্দিত হলাম। জীবনের এই নতুন অধ্যায়ের সূচনায় রিঙ্কুদেবী ও আপনাকে আমার অনেক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। মঙ্গলময় ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, আপনাদের যৌথ জীবন সুখের হোক। ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন।”

সকালেই এসে দিলীপকে শুভেচ্ছা জানান রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, সঙ্গে ছিলেন লকেট চট্টোপাধ্যায়, সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে ও অমিতাভ চক্রবর্তী প্রমুখ।

সুকান্ত উপহার দেন ফুলের তোড়া, মিষ্টি ও ধুতি-পাঞ্জাবি। অন্য নেতারাও এনেছিলেন উপহারসামগ্রী। দিলীপও প্রত্যেককে পাল্টা উপহার দিয়েছেন— কাউকে শাড়ি, কাউকে পাজামা-পাঞ্জাবি, কারও হাতে তুলে দিয়েছেন ধুতি। তবে তাঁরা বিকেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে থাকবেন না।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *