নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, মুর্শিদাবাদ : নিশ্ছিদ্র উত্তেজনার আবহে মুর্শিদাবাদের জাফরাবাদে নিহত বৃদ্ধ ও তাঁর ছেলের বাড়িতে পৌঁছলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল ঘরে পা দিতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহত বৃদ্ধের স্ত্রী। পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “সব হারিয়েছি। ঘুমোতে পারছি না। দয়া করে কিছু করুন।” তাঁর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনার পর রাজ্যপাল সাহায্যের আশ্বাস দেন এবং ‘শান্তিকক্ষ’ (পিস রুম)-এর একটি হেল্পলাইন নম্বরও দেন পরিবারের হাতে। রাজ্যপাল বলেন, “এলাকায় শান্তি ফেরানো হবে। প্রয়োজনে এই নম্বরে সরাসরি ফোন করুন।”
জোড়া খুনের ঘটনায় ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদেরও খুব শিগগির ধরা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন দক্ষিণবঙ্গের এডিজি সুপ্রতিম সরকার।
নয়া ওয়াকফ আইনকে কেন্দ্র করে ছড়ানো অশান্তির জেরে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ, সুতি ও ধুলিয়ানের বহু মানুষ গঙ্গা পার হয়ে মালদহে আশ্রয় নিয়েছেন। শুক্রবার রাজ্যপাল সেখানে তাঁদের ত্রাণ শিবিরে যান। পরদিন, শনিবার, তিনি যান শমসেরগঞ্জের অশান্ত এলাকা এবং দুই নিহতের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। নিহত বৃদ্ধের পরিবার জানায়, তাঁরা চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন, লুটপাট হয়েছে তাঁদের বাড়িতেও। তাঁরা এলাকায় স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্প স্থাপনের দাবি জানান।
রাজ্যপাল স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গেও কথা বলেন। সকলের অভিযোগ শোনার পর বলেন, “রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠছে। অভিযোগ জানাতে যাতে সমস্যা না হয়, সে জন্য হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া হয়েছে। শান্তি প্রতিষ্ঠাই এখন প্রধান লক্ষ্য। রাজ্য সরকারকে বলব, দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ করুন।”
এর আগে নিহতের বাড়িতে যান মালদহের ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্রও।
জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরাও নিহত বৃদ্ধের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন ও আশ্বাস দেন তাঁদের পাশে থাকার। তাঁরা ধুলিয়ানের বেতবোনাতেও যান, যেখানে কিছু মহিলা কমিশনের সদস্যদের পা জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং নিরাপত্তার স্বার্থে স্থায়ী বিএসএফ ক্যাম্পের দাবি জানান। এক সদস্য বলেন, “দেশবাসী ও কেন্দ্র সরকার আপনাদের পাশে রয়েছে। বিএসএফ নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে।”
রাজ্যপাল ধুলিয়ানেও যান। তবে তিনি চলে যাওয়ার পরে স্থানীয়দের একাংশ পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ রাজ্যপালকে তাঁদের কাছে যেতে দেয়নি, ফলে তাঁরা অভিযোগ জানাতে পারেননি। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিএসএফ। পুলিশ যদিও জানায়, রাজ্যপালের সফরসূচি তাঁদের হাতে থাকে না।
প্রায় এক ঘণ্টা চলা অবস্থান-বিক্ষোভের পর অবশেষে রাজ্যপাল সেখানেও পৌঁছন এবং ক্ষুব্ধ বাসিন্দাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন।