নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, ভারত : পাকিস্তান সফরের আগে কলকাতা ঘুরে গিয়েছিলেন ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রা। ছিলেন শহরের এক নেটপ্রভাবীর সঙ্গে।
পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ইউটিউবার জ্যোতি মলহোত্রা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় এসেছিলেন। শহরের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছিলেন তিনি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলকাতার এক নেটপ্রভাবী যুবক। সামাজিক মাধ্যমে জ্যোতির পোস্ট করা ভিডিয়ো ঘেঁটে উঠে এসেছে এই তথ্য।
News Bangla Online ওই নেটপ্রভাবীর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি জানান, তিনি আসানসোলের বাসিন্দা হলেও এখন কলকাতায় থাকেন। গত বছর রামমন্দির উদ্বোধনের সময় অযোধ্যায় গিয়ে জ্যোতির সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়েছিল। সেই সূত্রেই এই ফেব্রুয়ারিতে কলকাতায় এসে তাঁদের দেখা হয় এবং দু’জনে মিলে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ান।
জ্যোতি কলকাতা নিয়ে একটি ভ্লগ বানাচ্ছিলেন, যার মূল বিষয় ছিল ‘বিরিয়ানি টেস্ট’। এর আগে কলকাতায় এসে তিনি পার্ক সার্কাসের একটি জনপ্রিয় বিরিয়ানির দোকানে খেয়েছিলেন। তাই এবার ওই নেটপ্রভাবী তাঁকে ব্যারাকপুরের একটি প্রসিদ্ধ বিরিয়ানির দোকানে নিয়ে যান। যুবক জানান, “আমরা ব্যারাকপুরেও গিয়েছিলাম। ওখানকার এক জনপ্রিয় বিরিয়ানির দোকানে খেয়েছিলাম।”
প্রসঙ্গত, ব্যারাকপুর সেনা ছাউনি ও বায়ুসেনা ঘাঁটির জন্য পরিচিত। তবে ওই যুবকের দাবি, জ্যোতি কখনওই সে বিষয়ে কিছু জানতে চাননি। আরও জানান, ব্যারাকপুরের মণিরামপুর ঘাট থেকে তাঁরা শেওড়াফুলি হয়ে হাওড়ায় এক নেটপ্রভাবীর বিয়েতেও যান। হাওড়া ব্রিজ ও হাওড়া-শিয়ালদহ স্টেশন নিয়েও ভ্লগ করেছিলেন জ্যোতি।
গত শনিবার হরিয়ানা পুলিশ জ্যোতিকে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে গ্রেফতার করে। ধৃত আরও পাঁচ জন রয়েছেন। নেটপ্রভাবী ‘বন্ধু’ বলেন, “আমি স্তম্ভিত। বিশ্বাসই করতে পারছি না। এ সবের ফলে আমাদের মতো ভ্লগারদের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে।” বর্তমানে ওই যুবক আন্দামানে রয়েছেন, ভ্লগের কাজে।
তিনি আরও জানান, পুলিশ যে পাঁচ জনকে জ্যোতির সঙ্গে গ্রেফতার করেছে, তাঁদের কাউকে তিনি চেনেন না।
তদন্তে জানা গিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে কলকাতা থেকে ঘুরে যাওয়ার পর মার্চে পাকিস্তান যান জ্যোতি। ওয়াঘা সীমান্ত পেরিয়ে তিনি ঘুরেছেন লাহৌর, আনারকলি বাজার, পাক পাঞ্জাবের কটাস রাজ মন্দিরসহ বেশ কিছু জায়গায়। তাঁর ইউটিউব চ্যানেলে পাকিস্তানি খাবার ও ভারত-পাক সংস্কৃতির তুলনামূলক ভিডিওও রয়েছে।
কলকাতায় ভ্লগ করার সময়ই এক লাইভে তিনি পাকিস্তান সফরের পরিকল্পনার কথাও জানান। এক পাকিস্তানি দর্শক জানতে চেয়েছিলেন, তিনি কোথায় কোথায় যেতে চান। জ্যোতি জানান, “পাকিস্তানে ভিসা সহজ নয়। সব জায়গার জন্য অনুমতি পাওয়া যায় না। আমি লাহৌর যাচ্ছি, আর করাচি ও রাওয়ালপিন্ডিও যাওয়ার ইচ্ছে আছে।”
হরিয়ানা পুলিশের দাবি, পহেলগাঁও হত্যাকাণ্ডের পর ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েনের আবহে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ ছিল জ্যোতির। হিসার জেলার পুলিশ সুপার শশাঙ্ককুমার সবন্ত বলেন, “জ্যোতির কাছে সেনা-সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য না থাকলেও পাক আধিকারিকদের সঙ্গে ওর সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। তাঁরা জ্যোতিকে নিজেদের ‘অ্যাসেট’ করে তুলেছিলেন।”
তিনি আরও জানান, জ্যোতির মাধ্যমে অন্য ইউটিউবারদের সঙ্গেও সংযোগ তৈরি হয়েছিল, যাঁদের মধ্যে কেউ কেউ পাকিস্তানের তথ্য বিভাগের (PIO) সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন।
গত বছর দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের আয়োজিত ইফতার পার্টিতেও অংশ নেন জ্যোতি। এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার বলেন, “সামাজিকতায় বাধা নেই, কিন্তু কার উদ্দেশ্য কী, সেটা বোঝা জরুরি। পাকিস্তানের সঙ্গে যোগাযোগ, বিশেষ করে উত্তেজনার সময়ে, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের পক্ষে বিপজ্জনক হতে পারে।”