নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, মুভি ও বিনোদন: তখন বয়স মাত্র পাঁচ। খেলাধুলার মাঝে দিনে ২০ ঘণ্টা শুটিং করত সেই ছোট্ট মেয়ে। ছোট কেটে রাখা চুল আর মিষ্টি গানের সঙ্গে সে টেলিভিশনের পর্দায় আত্মপ্রকাশ করল। সে ছিল ‘পটলকুমার গণওয়ালা’ ধারাবাহিকের পটল, বা হিয়া। সেই বাচ্চা এখন কিশোরী, সদ্য পনেরো বছর বয়সী। ধারাবাহিক শেষ হয়ে গেছে প্রায় আট বছর আগে। মাঝে বেশ কিছু ধারাবাহিকে তাকে দেখা গেলেও হঠাৎ করে যেন বাংলা ধারাবাহিকের জনপ্রিয় ‘পটল’ অন্তরালে চলে গেল। ফোন ধরাও কঠিন এখন জেন আলফা প্রজন্মের এই তারকা।
তাহলে এখন কী করছে সে? আবার কি অভিনয়ে ফিরবে? নাকি অভিমান করে সব থেকে দূরে সরে গেছে ? নিউজ বাংলা অনলাইন খোঁজ নিয়ে জানলো কিছু কথা।
প্রশ্ন: জেন আলফা প্রজন্ম হলেও হিয়ার কি ফোন নেই?
হিয়া: ফোন ব্যবহার করতে খুব পছন্দ করি না। ছোটবেলা থেকে মা’র নম্বরে সবাই ফোন করত, তাই মাকে ফোন করলেই আমি পাওয়া যাবে। আমার আলাদা একটি ব্যক্তিগত নম্বর আছে, সেটা আমি খুব সীমিত মানুষের সঙ্গে শেয়ার করি।
প্রশ্ন: কেমন আছো? এখন কী করছো?
হিয়া: এখন বেশ চাপের মধ্যে আছি। আগামী বছর বোর্ড পরীক্ষা আছে, তাই পড়াশোনায় ব্যস্ত।
প্রশ্ন: কোন স্কুলে পড়ছো?
হিয়া: হীরেন্দ্রলীলা পত্রনবিশ স্কুলে।
প্রশ্ন: এত জনপ্রিয় ধারাবাহিকের পর এতটা লুকিয়ে পড়ার কারণ?
হিয়া: এখন বিরতি নিয়েছি। শুধু পড়াশোনা করছি। ভবিষ্যতে অনেক পরিকল্পনা আছে, ধীরে ধীরে প্রকাশ করব।
প্রশ্ন: ছোটবেলা থেকে এত জনপ্রিয়তা, স্কুলে কি তার জন্য বিশেষ সুবিধা পাও?
হিয়া: সিরিয়ালের জন্য অনেক আলোচনা হত। একই স্কুলে থাকায় সবাই চেনে। ‘আলো ছায়া’, ‘ফেলনা’ ধারাবাহিকের সময়ও স্কুলে সহযোগিতা পেয়েছি। শুটিংয়ের ফাঁকে পড়াশোনা চালিয়ে গিয়েছি।
প্রশ্ন: এখন সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া কেমন?
হিয়া: আগে সিরিয়াল নিয়ে আলোচনা হত, এখন আর হয় না।
প্রশ্ন: দর্শকরা প্রায় জানতে চায়, হিয়া কোথায়?
হিয়া: আমি বাড়িতে আছি, পড়াশোনা, লেখালিখি ও বই পড়া নিয়ে ব্যস্ত। সম্পাদনার কাজ শিখছি। আমি কোনো সামাজিক মাধ্যমে নেই, ইনস্টাগ্রাম বা ফেসবুকে সক্রিয় নই। শুধু বলতে চাই, আমি বেঁচে আছি।
প্রশ্ন: আগে ইনস্টাগ্রামে রিল বানাতে দেখা যেত, অনেক কটাক্ষ হয়েছিল, তাই কি দূরে সরে গেলে?
হিয়া: অনেকেই বিশ্বাস করবে না, কিন্তু আমি কখনোই কমেন্ট পড়ি না। নেতিবাচকতা এড়িয়ে ভালভাবে বাঁচতে চাই। আমি পাবলিক ফিগার, তাই সমালোচনা স্বাভাবিক। তবু তা আমাকে কখনো আঘাত দেয়নি।
প্রশ্ন: ইনস্টাগ্রাম রিল বানানো কেন বন্ধ?
হিয়া: এখন আর রিল বানাতে ইচ্ছে করে না, সময়ও লাগে। পরিবারের সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে, আমি একটু বোরিং।
প্রশ্ন: আজকাল তোমার বয়সিরা নেটপ্রভাবী হওয়ার চেষ্টা করে, তোমার তেমন ইচ্ছে নেই?
হিয়া: অনেকেই পড়াশোনার পাশাপাশি করে, কিন্তু আমার ইচ্ছে নেই। সাজগোজ করতে হয়, গান খুঁজতে হয়, সময় লাগে। শুটিংয়ের সময় করতাম, কারণ সুবিধে ছিল। এখন সময় অন্য কাজে ব্যবহার করাই ভালো মনে হয়। আমার নামে অনেক ভুয়ো অ্যাকাউন্ট আছে।
প্রশ্ন: টিভির খ্যাতি ছাড়া দাওয়ার মতো কঠিন, তুমি কি সেটা পারছো?
হিয়া: হ্যাঁ, খ্যাতি ছাড়া সহজ নয়। আমি সেটা মেনে নিয়েছি, নিজের ইচ্ছে নিয়ে সব থেকে দূরে আছি।
প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
হিয়া: এখন ভাবছি কী করব। ব্যবসায়ী পরিবারে বড় হয়েছি, তাই বাণিজ্য শাখায় পড়াশোনা শুরু করেছি।
প্রশ্ন: এত খ্যাতি থেকে দূরে থাকা সহজ?
হিয়া: টাকা সব মা দেখতো, আমি জানতাম না। টাকা না পেলেও অভিনয় করতাম, কারণ ভালো লাগত। এত ভালোবাসা পেয়েছি যা অর্থের চেয়েও বড়।
প্রশ্ন: আবার খ্যাতির আলো পেতে ইচ্ছে করে?
হিয়া: মাঝে মাঝে ইচ্ছে হয়, আবার অসুবিধাও আছে। বয়স বাড়ার সঙ্গে অসুবিধা বেড়েছে। কাজটা ভালোবাসি, তাই সুবিধাও দেখেছি।
প্রশ্ন: এখন ধারাবাহিক দু-মাসে শেষ হয়, পেশা অনিশ্চিত মনে হয়?
হিয়া: আমার সময়ের ইন্ডাস্ট্রি ও এখনকার অনেক আলাদা। তখন দর্শক নিয়মিত সিরিয়াল দেখত। এখন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বেশি, আর কেউ সন্ধ্যায় টিভি দেখেনা। আমার সময়টা ভাল ছিল, যদিও কঠিনতাও পেয়েছি। দিনে ২০ ঘণ্টা শুটিং করতাম, ঘুম কম। তবে আমি খুব দুষ্টু ছিলাম, খেলার সময় বের করতাম।
প্রশ্ন: অনিশ্চিত পেশার কারণে পড়াশোনায় বেশি মনোযোগ?
হিয়া: হা, পড়াশোনা করতে কারও ভালো লাগে না, কিন্তু প্রয়োজন। অনেকেই খ্যাতি পেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেয়, এটা ভুল। জীবন অনিশ্চিত, ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ না হলে অন্য কিছু করতে হবে।
প্রশ্ন: শুটিংয়ের স্মৃতি?
হিয়া: অনেক কিছু ভুলে গেছি। সবাই মিলে আমাকে সাইকেল উপহার দিয়েছিল, সেটা মনে আছে। পরিচালক সাহেব-আঙ্কেলদের মুখ এখনো চিনতে পারি।
প্রশ্ন: প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছ?
হিয়া: হা হা, কেউ সাহস করে বলতে পারে না, এটা ভালো।
প্রশ্ন: রাগী মনে হয়?
হিয়া: না, একটু গম্ভীর, তাই তেমন মনে হয়। স্কুলে কেউ এখনও উপহার দেয়নি।
প্রশ্ন: অন্তত চকলেট?
হিয়ার মা: হিয়া অন্যরকম। জন্মদিনে পার্টি বা নতুন জামার চাই না, বরং দুঃস্থদের খাওয়াতে চায়। এখনকার বাচ্চারা পার্টি করে, আমাদের নিশ্চিন্ত।
প্রশ্ন: এত পরিবর্তন কীভাবে?
হিয়া: সবাই বাইরে পার্টি করে, আমি আলাদা হতে চাই। জন্মদিনে গরিব বা অনাথদের খাওয়াই। গত বছর শুরু করেছি, এবার থেকে আরও বড় করব।
প্রশ্ন: ইন্ডাস্ট্রির কার সঙ্গে যোগাযোগ?
হিয়া: কাউকে যোগাযোগ রাখি না। ‘ভূতূ’ ধারাবাহিকের আর্শিয়ার সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা হয়।
প্রশ্ন: নতুন প্রস্তাব আসছে?
হিয়া: প্রতি সপ্তাহে আসে, কিন্তু মা’কে বলেছি এখন কিছু করব না। এখনকার অবস্থা কেউ ভালো জানে না। সময় এলে আবার আসব।
প্রশ্ন: শুটিং ফ্লোর মিস করো?
হিয়া: না, এখন না। বাবা আমার ক্লিপগুলো দেখে শুনিয়ে হাসে।
প্রশ্ন: ‘পটলকুমার’ পরিচয় থেকে বের হতে পারছো?
হিয়া: না, এখনো ‘পটলকুমার’ ধারাবাহিক দিয়েই চেনে। ছোটবেলা রেগে যেতাম ডাক শুনে, এখন মানিয়ে নিয়েছি আর ভালো লাগে।