নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ : ‘পোস্টিং’ বিতর্ক ঘিরে রাজ্যের জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট’ (WBJDF)-এর সঙ্গে সম্পর্ক থেকে ধীরে ধীরে সরে আসছে বিজেপি। এই অবস্থান আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর সাম্প্রতিক সাংবাদিক বৈঠকে।
ডব্লিউবিজেডিএফ অভিযোগ করেছে, অনিকেত মাহাতো, দেবাশিস হালদার ও আসফাকুল্লা নাইয়ার বিরুদ্ধে তৃণমূল সরকার প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। শুভেন্দু অধিকারী এই অভিযোগের বিরোধিতা না করলেও, সংগঠনটির ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাঁর মতে, এই সংগঠনের ‘ভুল রাজনৈতিক অবস্থান’ আরজি কর আন্দোলনের পরিসমাপ্তির অন্যতম কারণ।
অনিকেত মাহাতো নিজের নির্ধারিত পোস্টিং গ্রহণ না করায় বেতনও নিচ্ছেন না বলে জানানো হয়েছে। অন্যদিকে, দেবাশিস ও আসফাকুল্লা সরকার নির্ধারিত পোস্টিংয়ে যোগ দিলেও, কলকাতা হাইকোর্টে সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এ প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, ‘‘প্রতিহিংসার রাজনীতি চলছে। বাকিটা ওরাই দেখবে।’’
বক্তব্যে ছিল কটাক্ষের সুর। শুভেন্দু বলেন, ‘‘ওরা নীতিগতভাবে খুব দৃঢ়। বিচারধারার উপরে উঠে থাকে। কিন্তু সেই ভুল রাজনীতির জন্যই একটা আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে।’’ তিনি অভিযোগ করেন, আন্দোলনের সময় বিজেপি নেতাদের উপস্থিতিতে ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দিয়ে, জুনিয়র ডাক্তারদের একাংশই বিরোধী দলকে দূরে ঠেলে দেয়। সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু বলেন, ‘‘বিজেপিকে জায়গা না দিয়ে, বিজেপির সাংসদ বা বিধায়ক গেলেই ‘গো ব্যাক’ বলা হলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তো সুযোগ নেবেনই। তাই আগে ‘নো ভোট টু মমতা’ করতে হবে।’’
মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে জুনিয়র ডাক্তারদের যাওয়ার ঘটনাও টেনে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু। বলেন, ‘‘আপনারাই তো সন্ধেবেলা বৃষ্টিতে মমতার বাড়ি গিয়েছিলেন। অভয়ার বাবা-মাকে না জানিয়েই। কখনও ভাব, কখনও ঝগড়া—এভাবে লড়াই হয় না। চোখে চোখ রেখে, কোনো ‘সেটিং’ ছাড়া লড়াই করতে হয়।’’
শুভেন্দুর দাবি, এই জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন এসইউসিআই প্রভাবিত। সেই এসইউসিআই-কে ঘিরেও তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ক্ষমতায় আনার দায় যেমন আমার উপর চাপানো হয়, তেমনই এসইউসিআই-ও সেই দায় এড়াতে পারে না। কারণ, তৃণমূলের সঙ্গে ওরাও জোটে ছিল।’’
দেবাশিস হালদারকে উদ্দেশ করে শুভেন্দু বলেন, ‘‘আপনার বক্তৃতা আমি শুনেছি। আপনি যে দলের সদস্য, সেই দলও কিন্তু এই সরকার গড়ার সময় পাশে ছিল। জয়নগর, কুলতলিতে আপনাদের হয়েই আমি প্রচার করেছি।’’
সব মিলিয়ে, দেবাশিস, অনিকেত, আসফাকুল্লাদের পোস্টিং ইস্যুতে ‘প্রতিহিংসা’র অভিযোগকে মেনে নিয়েও তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেননি শুভেন্দু অধিকারী। বরং বিজেপির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার বার্তা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি।