নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, আন্তর্জাতিক : 02.05.2025 : রবিবার রাতে রাশিয়ার একাধিক সামরিক বিমানঘাঁটিতে নজিরবিহীন ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে ‘স্পাইডার ওয়েব’ বা ‘মাকড়সার জাল’। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি নিজেই গভীর রাতে এই অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন।
অভিযানটি ছিল অত্যন্ত নিখুঁত এবং কৌশলী। হামলায় ব্যবহৃত হয় ১১৭টি উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন, যেগুলিকে আগে থেকেই ট্রাকে করে চুপিচুপি পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল রাশিয়ার অভ্যন্তরে। পরে দূর থেকে রিমোট কন্ট্রোলে চালিয়ে ভয়াবহ হামলা চালানো হয়। ইউক্রেন দাবি করেছে, এই হামলায় অন্তত ৪০টি রুশ সামরিক বিমান ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
ড্রোন বহনের অভিনব পদ্ধতি
সংবাদমাধ্যম ‘পপুলার ফ্রন্ট’-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিস্ফোরক বোঝাই ড্রোনগুলি সারি সারি কাঠের বাক্সে ভরে ট্রাকের মাধ্যমে রাশিয়ায় পাঠানো হয়। নজর এড়াতে কাঠের ঢাকনার পরিবর্তে ব্যবহার করা হয় ধাতব প্লেট, যা রিমোটে খুলে ফেলা যায়। পরিকল্পনামাফিক ট্রাকগুলি রাশিয়ার চারটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটির কাছে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা হয়। সময়মতো সেই প্লেট সরিয়ে ড্রোনগুলো আকাশে ওড়ে ও হামলা চালায়।
কোন কোন ঘাঁটিতে হামলা
হামলার প্রধান লক্ষ্য ছিল রাশিয়ার ইরকুটস্ক অঞ্চলের বেলায়া বিমানঘাঁটি, যা ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্র থেকে প্রায় ৪৫০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এছাড়াও ওলেনিয়া, ইভানোভো এবং দিয়াগিলোভো বিমানঘাঁটিতেও আক্রমণ হয়েছে। বিশেষভাবে ইরকুটস্কে হামলাটি তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এই দূরত্ব ইউক্রেনীয় সাধারণ ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্রের পরিসরের বাইরে—যা স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয় যে ড্রোনগুলো বিমানঘাঁটির কাছাকাছি আগেই পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল।
রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক রোববার রাতে স্বীকার করেছে যে মুরমানস্ক, ইরকুটস্ক, ইভানোভো, রিয়াজান এবং আমুর অঞ্চলের মোট পাঁচটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে ড্রোন হামলা চালানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের দাবি, মুরমানস্ক ও ইরকুটস্ক বাদে বাকি সব অঞ্চলে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সফলভাবে ড্রোনগুলি ভূপাতিত করেছে। তবে এখনও পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি, আর সামরিক ক্ষতির প্রকৃত পরিমাণও স্পষ্ট নয়।
এদিকে, রাশিয়ার সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও, যেখানে দেখা যাচ্ছে ট্রাকের উপর সাজানো কাঠের বাক্সে ড্রোন সংরক্ষণ করা হয়েছে। রুশ সংবাদমাধ্যম ‘তাস’ জানায়, হামলার ঘটনায় জড়িত সন্দেহে একটি ট্রাকচালককে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ।
যুদ্ধের নিরিখে নজিরবিহীন
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই হামলা যদি ইউক্রেনের দাবি অনুযায়ী এতগুলো বিমান ধ্বংস করে থাকে, তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এটি হবে কিয়েভের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক ও সাফল্যজনক ড্রোন অভিযান।