নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, ভাঙড়, পশ্চিমবঙ্গ : সেতু এখনও তৈরি হয়নি, তার আগেই কৃতিত্বের লড়াইয়ে উত্তপ্ত ভাঙড়
একটি ইটও বসেনি এখনও। স্রেফ কাঠের সাঁকোর বদলে কংক্রিটের সেতু তৈরির জন্য বরাদ্দ হয়েছে অর্থ। কিন্তু তার আগেই ভাঙড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক সংঘর্ষ। নতুন সেতুর কৃতিত্ব কে নেবে— তা নিয়েই মুখোমুখি তৃণমূল ও আইএসএফ। ইতিমধ্যেই দুই দলের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়েছে প্রাণগঞ্জ ও বিজয়গঞ্জ বাজার সংলগ্ন এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ৫০ বছর আগে কাটাখালের উপর তৈরি হয় কাঠের সাঁকোটি, যা শুধু দুই বাজার নয়, ভাঙড় ১ ও ২ নম্বর ব্লক এবং উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার সংযোগ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রতিদিন স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রী-সহ কয়েক হাজার মানুষ এই সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে অবহেলায় কাঠের সাঁকোর পাটাতন ও রেলিং ভেঙে পড়ায়, যানজট ও ছোটখাট দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে সাঁকো সংস্কারের দাবিতে বহু দিন ধরেই সরব স্থানীয়রা।
অবশেষে, জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ১ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে সেচ দফতর। টেন্ডারসহ অন্যান্য প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে খবর, পুরনো কাঠের সাঁকোর জায়গায় ৬.৫ মিটার চওড়া ও ৩৭ মিটার লম্বা কংক্রিটের সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
তবে সেতুর নির্মাণ শুরুর আগেই কৃতিত্ব ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। একপক্ষে তৃণমূল দাবি করছে, ক্যানিং পূর্বের বিধায়ক সওকাত মোল্লার উদ্যোগে সেতুর বরাদ্দ পাওয়া গেছে। অপরপক্ষে আইএসএফের দাবি, ভাঙড়ের বিধায়ক নওসাদ সিদ্দিকীর দাবির ভিত্তিতেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে।
এই দ্বন্দ্ব সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অভিযোগ, সেতু নিয়ে ‘লাইভ ভিডিও’ করতে গেলে আইএসএফ কর্মীরা তৃণমূলের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন। পরে তারা কালো ব্যাজ পরে প্রতিবাদ মিছিল করে ভাঙড় থানায় স্মারকলিপি জমা দিতে গেলে ফের হামলার শিকার হন বলে অভিযোগ। যদিও তৃণমূল এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
নওসাদ সিদ্দিকী বলেন, “আমি বিধানসভায় বারবার দাবি জানিয়েছি এই সেতু নির্মাণের জন্য। প্রশাসন সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ করেছে। এখন সওকাতরা কৃতিত্ব দাবি করতে চাইছেন।” পাল্টা সওকাত বলেন, “নওসাদ ভাঙড়ে কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করেননি। তাঁর বিধায়ক কোটার টাকা থাকলে কৃতিত্ব দাবি করতে পারতেন।”
এ প্রসঙ্গে সেচ ও জলপথ দফতরের মন্ত্রী মানস ভুঁইঞা জানান, “সওকাত আমাদের দলের বিধায়ক। তিনি একাধিকবার এই সেতুর জন্য অনুরোধ করেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই কাজ শুরু হচ্ছে। কে কী বলেছেন বিধানসভায়, তা আমার জানা নেই।”
তৃণমূল ও আইএসএফের এই কৃতিত্বের লড়াইয়ে কটাক্ষ করেছে সিপিএম ও বিজেপিও। সিপিএম নেতা তুষার ঘোষ ও বিজেপি নেতা অবনী মণ্ডল অভিযোগ করেছেন, “উন্নয়ন নয়, প্রচারই এদের মূল উদ্দেশ্য।”
এই পরিস্থিতির মধ্যেই মঙ্গলবার সাঁকো পরিদর্শনে যান সওকাত ও সেচ দফতরের এগজ়িকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার অনির্বাণ ভট্টাচার্য। সওকাত জানান, “এই সেতু ভাঙড়বাসীর আবেগ। এক বছরের মধ্যেই নির্মাণ কাজ শেষ হবে। কিছু দোকান ভাঙতে হতে পারে, তবে তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।”