উচ্চ মাধ্যমিকে বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স নিয়ে পাশ করার পর কি নিয়ে পড়াশুনা করা যেতে পারে ?

উচ্চ মাধ্যমিকে বায়োলজি, কেমিস্ট্রি, ফিজিক্স নিয়ে পাশ করার পর কি নিয়ে পড়াশুনা করা যেতে পারে ?

Spread the love

নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, শিক্ষা ও কর্মসংস্থান:

✍️ কলমে: অভিজিৎ সাহা, কেরিয়ার কাউন্সেলর

উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান বিভাগে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি নিয়ে পাশ করার পর ছাত্রছাত্রীদের সামনে অসংখ্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ ও সম্ভাবনাময় কেরিয়ারের দরজা খুলে যায়। বিষয় পছন্দের ক্ষেত্রে নিজের আগ্রহ, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও সুযোগগুলি বিবেচনা করা উচিত। নীচে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ক্ষেত্র এবং সংশ্লিষ্ট কোর্স নিয়ে আলোচনা করা হলো:

১. চিকিৎসা বিজ্ঞান (Medical Sciences):

এটি পিসিবি (ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় একটি পছন্দ।

  • MBBS (ব্যাচেলর অফ মেডিসিন অ্যান্ড ব্যাচেলর অফ সার্জারি): ডাক্তার হওয়ার জন্য এটি মূল ডিগ্রি। এর জন্য সর্বভারতীয় স্তরে NEET (National Eligibility cum Entrance Test) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
  • BDS (ব্যাচেলর অফ ডেন্টাল সার্জারি): দাঁতের ডাক্তার হওয়ার জন্য এই ডিগ্রি। এর জন্যও NEET পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়।
  • BAMS (ব্যাচেলর অফ আয়ুর্বেদিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি): আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডাক্তার হওয়ার কোর্স।
  • BHMS (ব্যাচেলর অফ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি): হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডাক্তার হওয়ার কোর্স।
  • BUMS (ব্যাচেলর অফ ইউনানি মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি): ইউনানি চিকিৎসা পদ্ধতিতে ডাক্তার হওয়ার কোর্স।
  • BNYS (ব্যাচেলর অফ ন্যাচারোপ্যাথি অ্যান্ড যোগিক সায়েন্সেস): প্রাকৃতিক চিকিৎসা ও যোগ বিজ্ঞানের ওপর ডিগ্রি।
  • B.V.Sc & AH (ব্যাচেলর অফ ভেটেরিনারি সায়েন্স অ্যান্ড অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি): পশুচিকিৎসক হওয়ার জন্য এই কোর্স।

২. প্যারামেডিক্যাল কোর্স (Paramedical Courses):

চিকিৎসা ক্ষেত্রের সহায়ক এই শাখাগুলিতেও প্রচুর কাজের সুযোগ রয়েছে।

  • বি.ফার্ম (ব্যাচেলর অফ ফার্মাসি): ওষুধ প্রস্তুতি, গবেষণা ও বিতরণ সম্পর্কিত পড়াশোনা।
  • বিএসসি নার্সিং (B.Sc. Nursing): নার্সিং-এর ওপর স্নাতক ডিগ্রি।
  • বিপিটি (ব্যাচেলর অফ ফিজিওথেরাপি): শারীরিক ব্যায়াম ও চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিরাময়ের পদ্ধতি।
  • বিওটি (ব্যাচেলর অফ অকুপেশনাল থেরাপি): বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতাযুক্ত ব্যক্তিদের দৈনন্দিন জীবনযাপনে স্বনির্ভর করে তোলার চিকিৎসা।
  • বিএসসি ইন মেডিকেল ল্যাবরেটরি টেকনোলজি (B.Sc. MLT): রোগ নির্ণয়ের জন্য ল্যাবরেটরিতে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পর্কিত পড়াশোনা।
  • বিএসসি ইন রেডিওলজি/রেডিওগ্রাফি (B.Sc. in Radiology/Radiography): এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই ইত্যাদি ইমেজিং প্রযুক্তি সম্পর্কিত পড়াশোনা।
  • বিএসসি ইন অপারেশন থিয়েটার টেকনোলজি (B.Sc. in Operation Theatre Technology): অপারেশন থিয়েটারে চিকিৎসকদের সহায়তা করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ।
  • বিএসসি ইন ডায়ালিসিস টেকনোলজি (B.Sc. in Dialysis Technology): কিডনি বিকল রোগীদের ডায়ালিসিস প্রক্রিয়া পরিচালনা সম্পর্কিত জ্ঞান।
  • বিএসসি ইন অপ্টোমেট্রি (B.Sc. in Optometry): চক্ষু পরীক্ষা ও দৃষ্টিত্রুটি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • বিএএসএলপি (BASLP – Bachelor in Audiology and Speech Language Pathology): শ্রবণ ও বাক্-ভাষা সংক্রান্ত সমস্যা ও তার চিকিৎসা।

৩. জীববিজ্ঞান ও জীবপ্রযুক্তি (Biology and Biotechnology):

গবেষণা ও আকর্ষক কেরিয়ারের জন্য এই ক্ষেত্রগুলি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

  • বিএসসি ইন বায়োলজি/জুওলজি/বটানি/ফিজিওলজি (B.Sc. in Biology/Zoology/Botany/Physiology): জীববিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় স্নাতক ডিগ্রি। এরপর স্নাতকোত্তর (M.Sc.) ও গবেষণা (Ph.D.) করা যেতে পারে।
  • বিএসসি ইন মাইক্রোবায়োলজি (B.Sc. in Microbiology): অণুজীব সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • বিএসসি ইন বায়োকেমিস্ট্রি (B.Sc. in Biochemistry): জীবের রাসায়নিক প্রক্রিয়া সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • বিএসসি/বি.টেক ইন বায়োটেকনোলজি (B.Sc./B.Tech in Biotechnology): জৈবপ্রযুক্তিবিদ্যা, যা জিন প্রকৌশল, মলিকিউলার বায়োলজি ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করে।
  • বিএসসি ইন জেনেটিক্স (B.Sc. in Genetics): জীন ও বংশগতি সম্পর্কিত বিজ্ঞান।
  • বিএসসি ইন বায়োইনফরমেটিক্স (B.Sc. in Bioinformatics): কম্পিউটার সায়েন্স ও জীববিজ্ঞানের সমন্বিত একটি ক্ষেত্র।
  • বিএসসি ইন ফরেনসিক সায়েন্স (B.Sc. in Forensic Science): অপরাধ তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির প্রয়োগ।

৪. কৃষি ও পরিবেশ বিজ্ঞান (Agriculture and Environmental Sciences):

  • বিএসসি ইন এগ্রিকালচার (B.Sc. in Agriculture): কৃষিবিজ্ঞান সম্পর্কিত স্নাতক ডিগ্রি।
  • বিএসসি ইন হর্টিকালচার (B.Sc. in Horticulture): উদ্যানপালন বিদ্যা।
  • বিএসসি ইন ফিশারিজ সায়েন্স (B.Sc. in Fisheries Science): মৎস্যবিজ্ঞান।
  • বিএসসি ইন ফরেস্ট্রি (B.Sc. in Forestry): বনবিজ্ঞান।
  • বিএসসি ইন এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স (B.Sc. in Environmental Science): পরিবেশ বিজ্ঞান।

৫. অন্যান্য ক্ষেত্র (Other Fields):

  • বিএসসি ইন হোম সায়েন্স (B.Sc. in Home Science): খাদ্য, পুষ্টি, বস্ত্র, গৃহ পরিচালনা ইত্যাদি বিষয় অন্তর্ভুক্ত।
  • বিএসসি ইন ফুড টেকনোলজি/ফুড সায়েন্স অ্যান্ড নিউট্রিশন (B.Sc. in Food Technology/Food Science & Nutrition): খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, গুণমান নিয়ন্ত্রণ ও পুষ্টিবিজ্ঞান।
  • ডায়েটিশিয়ান বা নিউট্রিশনিস্ট (Dietitian/Nutritionist): খাদ্য ও পুষ্টি বিষয়ে পরামর্শদাতা। এর জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক বা ডিপ্লোমা কোর্স করা যেতে পারে।
  • শিক্ষকতা (Teaching): বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার জন্য বি.এড (B.Ed) বা অন্যান্য উচ্চতর ডিগ্রি (যেমন NET/SET পাশ করে অধ্যাপনা) করা যেতে পারে।
  • সাইকোলজি (Psychology): মনোবিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পড়াশোনা করে মনোবিদ বা কাউন্সেলর হওয়া যায়।
  • ক্লিনিক্যাল রিসার্চ (Clinical Research): নতুন ওষুধ ও চিকিৎসা পদ্ধতির উপর গবেষণা।
  • হেলথকেয়ার ম্যানেজমেন্ট/হসপিটাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Healthcare Management/Hospital Administration): হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থাগুলির পরিচালনা।
  • জার্নালিজম ও মাস কমিউনিকেশন (Journalism and Mass Communication): বিজ্ঞান সাংবাদিকতা একটি বিশেষায়িত ক্ষেত্র হতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাপটে:

পশ্চিমবঙ্গে উপরে উল্লিখিত বেশিরভাগ কোর্স করার সুযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ এই কোর্সগুলি প্রদান করে। রাজ্যস্তরে WBJEE (West Bengal Joint Entrance Examination) কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং ও ফার্মাসি কোর্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রবেশিকা পরীক্ষাও থাকতে পারে।

কিছু টিপস:

  • নিজের আগ্রহ চিহ্নিত করুন: কোন বিষয়ে আপনার সবচেয়ে বেশি কৌতূহল এবং কোন ক্ষেত্রে আপনি দীর্ঘমেয়াদী কেরিয়ার গড়তে চান তা ভাবুন।
  • ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করুন: বিভিন্ন ক্ষেত্রের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কাজের সুযোগ সম্পর্কে খোঁজখবর নিন।
  • সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করুন: কোর্সের জন্য ভালো মানের এবং স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা জরুরি।
  • প্রবেশিকা পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিন: চিকিৎসা বা ইঞ্জিনিয়ারিং-এর মতো প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে ভর্তির জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালোভাবে নিতে হবে।

উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞান নিয়ে পাশ করার পর পড়াশোনার প্রচুর বিকল্প রয়েছে। আপনার আগ্রহ ও যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক পথ বেছে নেওয়া আপনার ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রয়োজনে অভিজ্ঞ শিক্ষক বা কেরিয়ার কাউন্সেলরের পরামর্শ নিতে পারেন।

✍️ কলমে: অভিজিৎ সাহা, কেরিয়ার কাউন্সেলর, যোগাযোগ: +91- 7365 963 966

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *