নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, শালবনি, পশ্চিম মেদিনীপুর,পশ্চিমবঙ্গ: শালবনিতে তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের শিলান্যাসে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী, সঙ্গে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও
আগামী সোমবার শালবনিতে জিন্দাল গোষ্ঠীর প্রস্তাবিত তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস করতে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সফরে সঙ্গী হচ্ছেন প্রাক্তন ক্রিকেটার সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। এই উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন জিন্দাল গোষ্ঠীর শীর্ষকর্তারাও।
মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন, শালবনিতে ৮০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা হবে, যা ভবিষ্যতের বিদ্যুৎচাহিদা মেটাতে সহায়ক হবে। জিন্দাল গোষ্ঠী এই প্রকল্পে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। পাশাপাশি তারা একাধিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনাও করেছে। রাজ্য সরকারের দাবি, এই প্রকল্প ঘিরে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় কয়েক হাজার কর্মসংস্থান হবে।
এই ঘোষণায় নতুন আশার আলো দেখছেন শালবনি ও আশপাশের প্রায় ৩০টি গ্রামের বাসিন্দারা, যাঁরা একসময় বড় শিল্পের আশায় জমি দিয়েছিলেন। বাম আমলে এখানে একটি বৃহৎ ইস্পাত কারখানা তৈরির পরিকল্পনা থাকলেও, ২০০৮ সালের ২ নভেম্বর মাওবাদী হামলার পর সেই প্রকল্প স্থগিত হয়ে যায়। সেদিন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য একটি কর্মসূচি শেষে ফেরার পথে তাঁর কনভয়ে ল্যান্ডমাইন বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। ওই কনভয়ে কেন্দ্রীয় ইস্পাতমন্ত্রী রামবিলাস পাসওয়ানের গাড়িও ছিল। এই ঘটনার জেরে শিল্প স্থাপনের প্রচেষ্টা থমকে যায়।
২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সালে ফের আন্দোলন শুরু হয়। আন্দোলনের ফলস্বরূপ জমির একাংশে একটি সিমেন্ট কারখানা গড়ে ওঠে, যেখানে কিছু স্থানীয় যুবক কর্মসংস্থান পান। তবে এখনও প্রায় ৮০ শতাংশ জমি ফাঁকা পড়ে রয়েছে, যার জন্য বহুদিন ধরেই বড় শিল্প প্রকল্পের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
নবান্নের শীর্ষ আধিকারিকদের মতে, এই তাপবিদ্যুৎ প্রকল্পের শিলান্যাস শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ নয়, বরং বহু প্রতীক্ষিত উন্নয়নের সূচনা। এই প্রকল্প শুধু বিদ্যুৎ নয়, জঙ্গলমহলের জন্য কর্মসংস্থান ও আর্থিক বিকাশের নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে।
যদিও বর্তমানে মাওবাদীদের প্রভাব অনেকটাই কমেছে, প্রশাসন কোনও ঝুঁকি নিতে রাজি নয়। তাই মুখ্যমন্ত্রীর সফর ঘিরে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ইতিমধ্যেই একাধিক প্রস্তুতি বৈঠক করেছে।
সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন মেদিনীপুর সার্কিট হাউসে। মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল তিনি মেদিনীপুর কলেজ মাঠে একটি সরকারি অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, যেখানে গোয়ালতোড়ের একটি সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট-সহ একাধিক নতুন প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন।
সব মিলিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর এই সফর জঙ্গলমহলের জন্য বহুমাত্রিক তাৎপর্য বহন করছে— যেখানে এক সময় থেমে যাওয়া উন্নয়নের স্বপ্ন আবারও বাস্তবায়নের পথে হাঁটছে।
তবে এই সফরকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। তাঁদের দাবি, তৃণমূল এই কর্মসূচির মাধ্যমে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে নেমেছে।