দুর্গাপুরে সবুজ হারাচ্ছে, বেড়েই চলেছে দূষণ

দুর্গাপুরে সবুজ হারাচ্ছে, বেড়েই চলেছে দূষণ

Spread the love

নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, দুর্গাপুর : যেকোনও শিল্পাঞ্চলে মোট আয়তনের অন্তত ২৫ থেকে ৩৩ শতাংশ এলাকায় সবুজ থাকার কথা। কিন্তু দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের বর্তমান চিত্র উদ্বেগজনক। একসময় যেখানে সবুজ ছিল প্রায় ১৪ শতাংশ, এখন তা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৮ শতাংশে।

শহরের অভ্যন্তরে রাস্তা সম্প্রসারণ, বহুতল নির্মাণ এবং বিভিন্ন পরিকাঠামো প্রকল্পের জন্য অগণিত গাছ কাটা হয়েছে। সেই গাছগুলোর জায়গায় পর্যাপ্ত নতুন গাছ রোপণ করা হয়নি। এর ফলে দুর্গাপুরের বাতাস ক্রমশ বিষাক্ত হয়ে উঠছে।

সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয়, পরিবেশ রক্ষা তো দূরের কথা—শহরের মধ্যেই হট মিক্সিং প্লান্ট বসানো হয়েছে, যেখানে বিটুমিন ও পাথরের মিশ্রণ তৈরি হয়। বিটুমিন গলানোর সময় প্লান্ট থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া শহরের বাতাসে মারাত্মক দূষণ ছড়াচ্ছে।

দুর্গাপুর গভর্নমেন্ট কলেজের পাশ দিয়ে একটি রাস্তা বেসরকারি আইকিউ সিটি হাসপাতাল পর্যন্ত গিয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ‘মোহনবাগান সরণি’। এই রাস্তাটির এক পাশে বনভূমি এবং অন্য পাশে সিআরপিএফ ক্যাম্প। কয়েক মাস আগে ওই বনভূমির শতাধিক গাছ কেটে ফেলা হয়। স্থানীয়রা ভেবেছিলেন, বড় গাছ সরিয়ে নতুন গাছ লাগানো হবে। কিন্তু পরে দেখা যায়, সেই জমিতেই হট মিক্সিং প্লান্ট বসানো হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা অভিষেক গড়াই জানান, “প্লান্ট থেকে যে ধোঁয়া বের হয়, তা এতটাই ভয়াবহ যে রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করা স্কুলপড়ুয়া বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়ছে।”

জানা গেছে, ওই জমি দুর্গাপুর স্টিল প্লান্ট (ডিএসপি)-র মালিকানাধীন। ডিএসপি কর্তৃপক্ষই একটি বেসরকারি সংস্থাকে ওই জমিতে প্লান্ট বসানোর অনুমতি দিয়েছে। প্লান্টে তৈরি বিটুমিন মিশ্রণ শহরের বিভিন্ন রাস্তার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে।

তবে এই নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, পরিবেশ ধ্বংস করে কীভাবে দূষণকারী প্লান্ট বসানো হলো? ডিএসপির নগর প্রশাসনিক ভবনের চিফ জেনারেল ম্যানেজার অরূপ দত্ত চৌধুরী প্রথমে দাবি করেন, “ওই জমিতে কোনও গাছ ছিল না, জায়গাটি ফাঁকা ছিল।” পরে অবশ্য তিনি বিস্তারিত কথা বলার জন্য দপ্তরে আসার অনুরোধ করেন।

এই বিষয়ে পরিবেশ কর্মী কবি ঘোষ বলেন, “মোহনবাগান সরণির ধারে যে বনভূমি ছিল, সেখানেই প্রচুর গাছ কেটে হট মিক্সিং প্লান্ট বসানো হয়েছে। এখন দুর্গাপুরের বাতাস বিষাক্ত। শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, হজমের সমস্যা-সহ নানা রোগ ছড়াচ্ছে। আমরা দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদে অভিযোগ জানিয়েছি।”

স্থানীয় পরিবেশকর্মী শুধাজিৎ মুখোপাধ্যায় স্পষ্ট বলেন, “এই প্লান্ট থেকে যে পরিমাণ দূষণ হচ্ছে, তা নিজের চোখে দেখেছি। অবিলম্বে এটি বন্ধ না করলে শহরের মানুষ শ্বাসই নিতে পারবে না।”

এদিকে, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের দুর্গাপুর শাখা এই বিষয়ে কিছুই জানে না। শাখার আধিকারিক অরূপ দে বলেন, “কোথায় প্লান্ট বসানো হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।”

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *