বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত অঞ্চল এখন গাজা, পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নের মতো: রাষ্ট্রপুঞ্জের সতর্কবার্তা

বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত অঞ্চল এখন গাজা, পরিস্থিতি দুঃস্বপ্নের মতো: রাষ্ট্রপুঞ্জের সতর্কবার্তা

Spread the love

নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, আন্তর্জাতিক : বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে ক্ষুধার্ত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে গাজা। অবস্থা এতটাই ভয়াবহ যে, যে কোনো সময় সেখানে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। তাদের অনুমান, আড়াই কোটি মানুষ এই দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন।

শুক্রবার রাষ্ট্রপুঞ্জ জানায়, তারা গাজায় যে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছে, তা সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছে। ইজরায়েলকে উদ্দেশ করে জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সংস্থা (OCHA) অভিযোগ করে জানায়, ত্রাণ সরবরাহে ইচ্ছাকৃত বাধা সৃষ্টি করছে তেলআবিব। সংস্থার মুখপাত্র জেন্স লারকে বলেন, “গত কয়েক দিনে আমাদের সহায়তা কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি ব্যাহত হয়েছে। এমন পরিস্থিতি সাম্প্রতিক কালে দেখা যায়নি।”

লারকে আরও জানান, কারেম আবু সালেম বা কেরেম শালোম সীমান্ত দিয়ে ৯০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢোকানোর অনুমতি দেওয়া হলেও, বাস্তবে এর মধ্যে ৬০০টিরও কম ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পেরেছে। ফলে খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছে গাজা; যা কার্যত একটি মানবিক বিপর্যয়।

এক গাজাবাসী আল জাজিরাকে বলেন, “আমাদের কাছে আটা, তেল, চিনি— কিছুই নেই। প্রতিদিন বাসি রুটি খাইয়ে সন্তানদের বাঁচিয়ে রাখছি। আমি কিছু চাই না, শুধু আমার সন্তানদের জন্য একটু খাবার চাই।” আর এক বাস্তুচ্যুত ব্যক্তি আবদুল কাদের রাবি বলেন, “ত্রাণ নিতে গেলেই দেখি শত শত মানুষ ভিড় করছেন। কেউ কেউ ধাক্কাধাক্কি করছেন। যদি শক্তিশালী না হও, তবে খালি হাতে ফিরতে হয়।”

আল জাজিরা সূত্রে জানা গেছে, গাজা শহর ও উত্তরাঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরে এক ফোঁটাও ত্রাণ পৌঁছায়নি। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস এবং রাফাতেও মানুষ প্রতিদিন খাবারের জন্য হিমশিম খাচ্ছেন।

ইজরায়েল আন্তর্জাতিক চাপের মুখে অবরোধ শিথিল করে ‘সীমিত’ ত্রাণ প্রবেশে অনুমতি দিলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য বলে মনে করছে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সংস্থার মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক বলেন, “গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এত ভয়াবহ পরিস্থিতি আগে হয়নি।”

এমন অবস্থায় গত ২৪ ঘণ্টায় ইজরায়েলি ড্রোন হামলায় আরও ৬০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬ জন খান ইউনিসের এক অস্থায়ী শিবিরে নিহত হন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, এদিন অন্তত ৬০টি মৃতদেহ ও ২৮৪ জন আহত ব্যক্তি হাসপাতালে আনা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আল কাসেম ব্রিগেড ইজরায়েলে হামলা চালালে প্রতিক্রিয়ায় গাজায় ব্যাপক হামলা শুরু করে ইজরায়েলি বাহিনী। কাতার, আমেরিকা ও মিশরের মধ্যস্থতায় ১৫ জানুয়ারি একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চের গোড়ায় পণবন্দি মুক্তি নিয়ে টানাপড়েনে ফের হামলা শুরু করে ইজরায়েল। এখনো প্রতিদিনই চলছে আক্রমণ। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু গাজা ভূখণ্ড পুরোপুরি দখলের ঘোষণাও দিয়েছেন।

অবরোধের তিন মাস পর সামান্য কিছু ত্রাণ প্রবেশের অনুমতি মিললেও, বাস্তব পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, অনেক শিশু শুধু পানি খেয়েই দিন কাটাচ্ছে। বাবা-মায়েরা সন্তানদের ক্ষুধা ভুলাতে বারবার পানি খাওয়াচ্ছেন। গাজার বাসিন্দারা বলছেন, “একটু আটা পেতে হলেও আমরা সব কিছু করতে রাজি।”

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *