ছক্কায় শুরু, চোখের জলে বিদায়! অভিষেকে নজর কাড়ল ১৪ বছরের বৈভব, তবু জয় এল না রাজস্থানের
IPL 2025

ছক্কায় শুরু, চোখের জলে বিদায়! অভিষেকে নজর কাড়ল ১৪ বছরের বৈভব, তবু জয় এল না রাজস্থানের

Spread the love

নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, IPL 2025: আইপিএলের অভিষেক ম্যাচেই নিজের জাত চিনিয়ে দিল ১৪ বছরের বৈভব সূর্যবংশী। রাজস্থানের হয়ে ২০ বলে ৩৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিল—এ লম্বা রেসের ঘোড়া। যদিও তার দুর্দান্ত ইনিংস সত্ত্বেও লখনউ সুপার জায়ান্টসের কাছে পরাজিত হল রাজস্থান রয়্যালস।

এডেন মার্করামের বলে স্টাম্পড হয়ে যখন ডাগআউটে ফিরছিল, বৈভবের চোখে জল। হেলমেট খুলে আঙুল দিয়ে চোখ মুছছিল সে—দৃশ্যটা দেখে মনে হতেই পারে শতরান হাতছাড়া হয়েছে। অথচ রান তখন মাত্র ৩৪। এত দুঃখের কারণ, অভিষেকেই নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিল সে। হয়তো ভাবছিল, ম্যাচটা শেষ করে আসতে পারত। কিন্তু এই ৩৪ রানের ইনিংসেই ইতিমধ্যেই সে বুঝিয়ে দিয়েছে, ভবিষ্যতের তারকা সে-ই।

রাজস্থানের হয়ে সঞ্জু স্যামসনের চোটের কারণে এক প্রান্তে ওপেন করতে নামে বৈভব। মাত্র ১৪ বছর ২৩ দিনের এই কিশোরকে ইমপ্যাক্ট প্লেয়ার হিসেবে দলে রেখেছিলেন রাহুল দ্রাবিড়রা। আর অভিষেকেই এমন কিছু করল সে, যার ফলে এখন তাকে একাদশের বাইরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে।

১৮১ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম বলেই বাজিমাত—শার্দূল ঠাকুরের বলে কভারের উপর দিয়ে দুর্দান্ত ছক্কা! এরপর আরও একটি ছক্কা আবেশ খানের বলে, এইবার ঠিক বোলারের মাথার উপর দিয়ে। ভয়ডরহীন এই ক্রিকেটই তার বড় শক্তি।

একটি সুযোগ অবশ্য দিয়েছিল সে—একবার ক্যাচ পড়েছে, দু’বার ক্যাচ হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছিল। কিন্তু আক্রমণ থামায়নি। পেসার বা স্পিনার—সবার বিরুদ্ধেই চালিয়ে খেলেছে।

যে বলটিতে আউট হল—সেটিও মারতে গিয়েছিল কভারের উপর দিয়ে, কিন্তু বল ঘুরে গিয়ে ব্যাটে না লাগায় স্টাম্পড হয়ে ফিরে যেতে হয়। বলটা সোজা গেলে হয়তো আরও একটি ছক্কা হতো!

২০ বলে ৩৪ রানের ইনিংসে ছিল দুটি চার, তিনটি ছক্কা। তার ব্যাটিংয়ে যশস্বী জয়সওয়ালও যেন আরও স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন। যশস্বীর নিজের অভিষেকও এসেছিল কম বয়সে, তাই হয়তো বৈভবের মধ্যেই নিজের প্রতিচ্ছবি দেখছিলেন।

বৈভবকে আউট করার পর ঋষভ পন্থের উচ্ছ্বাসই যেন প্রমাণ করল—এই ছেলেটিকে সহজভাবে নিলে চলবে না।

বিহারের তাজপুর গ্রামের ছেলে বৈভব চার বছর বয়সে বাবার কাছেই ক্রিকেট শেখা শুরু করে। পেশায় কৃষক হলেও ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা ছিল বাবার। বাড়ির পেছনে ছোট জায়গা পরিষ্কার করে শুরু হয়েছিল প্রশিক্ষণ। পরে ভর্তি হয় সমস্তিপুর ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে। সেখান থেকে নজরে পড়ে যায় রঞ্জি ক্রিকেটার মণীশ ওঝার, যিনি বর্তমানে তার কোচ।

১২ বছর ২৮৪ দিন বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হলেও রেকর্ড হয়নি, কারণ আলিমুদ্দিনের রেকর্ড এখনও অক্ষত। তবে অনূর্ধ্ব-১৯ পর্যায়ে, বিশেষ করে বিনু মাঁকড় ট্রফিতে ও অস্ট্রেলিয়ার অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিরুদ্ধে ৫৮ বলে সেঞ্চুরি করে নজর কাড়ে।

আইপিএলের নিলামে বৈভব ছিলেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ ক্রিকেটার। ৩০ লাখ বেস প্রাইস থেকে শুরু হয়ে শেষমেশ রাজস্থান তাকে ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় দলে নেয়, দিল্লিকে হারিয়ে।

এবারের আইপিএলে অনেক তরুণই নজর কেড়েছেন—দিগ্বেশ রাঠী, অনিকেত বর্মাদের তালিকায় এবার নাম উঠল বৈভবেরও। তার ব্যাটিংয়ে শুরুটা হয়েছিল দারুণ, কিন্তু শেষটা করতে পারেননি যশস্বী বা পরাগ। জেতা ম্যাচ শেষমেশ হাতছাড়া হয় রাজস্থানের।

তবু, এই ম্যাচে ভারতের ক্রিকেট পেয়েছে এক নতুন সম্ভাবনার নাম—বৈভব সূর্যবংশী।

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *