নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, খেলাধুলা, ভারত : সোমবার হঠাৎ করেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেন বিরাট কোহলি। কিং কোহলির এই সিদ্ধান্তে হতবাক পুরো ক্রিকেট দুনিয়া। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন—যেখানে ফর্ম ও ফিটনেসে কোনও ঘাটতি ছিল না, সামনে ছিল ইংল্যান্ড সফরের মতো বড় সিরিজ, সেখানে এখনই কেন এমন সিদ্ধান্ত?
স্পোর্টস এডিটরদের মতে, কোহলির এই অবসর শুধু বিস্ময়করই নয়, বরং সাম্প্রতিক কিছু অদ্ভুত ঘটনার ধারাবাহিকতা। প্রথমে রোহিত শর্মার অবসর, এরপর কোহলি—একেবারে ২০১১-১২ সালের ঘটনার পুনরাবৃত্তির মতো, যখন পরপর সিরিজ হারের পর একাধিক সিনিয়র ক্রিকেটার বিদায় নিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে।
স্পোর্টস এডিটরদের মতে, বিসিসিআইয়ের অন্দরমহলে এমন কিছু ঘটছে যা এখনও প্রকাশ্যে আসেনি। কারণ, বিরাটের মনোভাব এবং শারীরিক প্রস্তুতি দেখে বোঝাই যাচ্ছিল যে তিনি ইংল্যান্ড সিরিজে খেলতে আগ্রহী। ১০ হাজার রানের মাইলফলকও তাঁর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। শারীরিক দিক থেকে তিনি পুরোপুরি ফিট ছিলেন। বিক্রান্ত বলেন, “অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মতো কঠিন সিরিজকে সব সময় বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা। যদিও গত পাঁচ বছরে টেস্টে কোহলির গড় কিছুটা কমেছে, তবুও তিনি ইংল্যান্ডের প্রস্তুতি নিয়েই চলছিলেন। আমার মনে হয় না তিনি সফরে যেতে চাইছিলেন না।”
জানা গেছে, প্রায় এক সপ্তাহ আগে কোহলি তাঁর টেস্ট অবসরের ইচ্ছার কথা বিসিসিআইকে জানিয়ে দেন। তবে নির্বাচকরা তাঁকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ করেছিলেন বলেও খবর। এমনকি, তাঁকে বোঝানোর চেষ্টাও নাকি হয়েছিল।
এদিকে, কিছু প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, কোহলি নাকি ফের টেস্টে অধিনায়কত্বে ফিরতে চেয়েছিলেন, কিন্তু বোর্ড সেই প্রস্তাবে আগ্রহ দেখায়নি। যদিও এই বিষয়গুলি নিয়ে বিরাট বা বিসিসিআই কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেনি, সবটাই আপাতত জল্পনার পর্যায়ে।
আইসিসি-র বর্তমান র্যাঙ্কিংয়ে চতুর্থ স্থানে থাকা কোহলি প্রায় সাত বছর ভারতের টেস্ট দলের অধিনায়ক ছিলেন এবং ইতিহাসের সবচেয়ে সফল ভারতীয় টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে বিবেচিত হন। তাই ইংল্যান্ডের মতো এক গুরুত্বপূর্ণ সিরিজের ঠিক আগে এমন বিদায় ভক্তদের কাছে বিস্ময়করই লাগছে।
ভারতীয় ক্রিকেটের অন্যতম সফল ও প্রভাবশালী ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি হঠাৎ করেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন। ৩৬ বছর বয়সী এই ক্রিকেটার ১২৩টি টেস্ট ম্যাচে ৯,২৩০ রান, ৩০টি সেঞ্চুরি এবং ৪৬.৮৫ গড় নিয়ে বিদায় নিলেন। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত ৬৮টি টেস্টে ৪০টি জয় পেয়েছে, যা একজন ভারতীয় অধিনায়কের সর্বোচ্চ সাফল্য।
কোহলির এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময়ে এলো, যখন ভারত ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিসিসিআই-এর পক্ষ থেকে তাঁকে সিরিজটি পর্যন্ত খেলার অনুরোধ জানানো হয়েছিল, তবে কোহলি নিজ সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন।
সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- ফর্মে অবনতি: গত কয়েক বছরে কোহলির টেস্ট গড় ৫৪ থেকে ৪৬-এ নেমে এসেছে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে মাত্র তিনটি সেঞ্চুরি করেছেন।
- অভ্যন্তরীণ চাপ: বিসিসিআই-এর সঙ্গে কোহলির সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং অধিনায়কত্ব থেকে সরে যাওয়ার পরবর্তী পরিস্থিতি তাঁর মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
- পরবর্তী প্রজন্মের জন্য জায়গা ছেড়ে দেওয়া: কোহলি নিজেই বলেছেন, “আমি সবকিছু দিয়েছি।” সম্ভবত তিনি নতুন খেলোয়াড়দের জন্য জায়গা করে দিতে চেয়েছেন।
প্রতিক্রিয়া:
কোহলির অবসরের পর ক্রিকেট বিশ্বে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাবেক অধিনায়ক এমএসকে প্রসাদ বলেছেন, “বিসিসিআই-এর সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কোহলির অবসর দুঃখজনক ও হতাশাজনক।
বিরাট কোহলির টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর ভারতীয় ক্রিকেটের জন্য একটি যুগের অবসান। তাঁর অবদান ও নেতৃত্ব ভবিষ্যতের খেলোয়াড়দের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।