নিউজ বাংলা অনলাইন ডেস্ক, পশ্চিমবঙ্গ : দিলীপ ঘোষ কি তবে বঙ্গ বিজেপির ‘আডবাণী’?
দুটি ছবি। সময়ের ব্যবধান দুই দশক। কিন্তু মিল স্পষ্ট—দু’টি ক্ষেত্রেই পটভূমি দুই সমুদ্রতটের শহর, কেন্দ্রে বিজেপির দুই নেতা, এবং ঘটনাপরম্পরায় বিস্ময় জাগানো ‘প্রশংসা’।
২০০৫ সালের জুনে করাচিতে মহম্মদ আলি জিন্নার সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে তাঁকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ও ‘ঐক্যের প্রতীক’ বলেছিলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী। দলের কট্টর হিন্দুত্ববাদী ধারা এই মন্তব্য মেনে নিতে পারেনি। ফলস্বরূপ, বিজেপি সভাপতির পদ ছাড়তে হয় তাঁকে। ধীরে ধীরে রাজনীতির মূল মঞ্চ থেকে সরে যান তিনি, ঠাঁই হয় ‘মার্গদর্শক মণ্ডলী’তে—যা কার্যত ‘বানপ্রস্থ’।
প্রায় কুড়ি বছর পর, ২০২৫ সালের এপ্রিলে, সেই ছবির ছায়া দেখা গেল পশ্চিমবঙ্গের দিঘায়। রাজ্যের প্রাক্তন বিজেপি সভাপতি, প্রাক্তন সাংসদ দিলীপ ঘোষ হাজির হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে নির্মিত জগন্নাথ মন্দিরের উদ্বোধনে। মঞ্চে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা করে বললেন, “মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে বড় কাজ হল”, “অক্ষয়তৃতীয়ার দিনে হিন্দু জাগরণের কাজ করেছেন”।
রাজ্য রাজনীতির ‘স্ট্রংম্যান’ ভাবমূর্তি গড়ে তোলা দিলীপের মুখে এ ধরনের প্রশংসা শোরগোল তুলেছে বিজেপির অন্দরে। তার পর থেকেই যেন ধীরে ধীরে রাজ্য বিজেপির কর্মকাণ্ড থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাঁকে।
৬ মে রাজ্য দফতরের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে ডাকা হয়নি দিলীপকে। পরদিন আরও বড় বৈঠক—সেখানেও অনুপস্থিত। কর্মসূচি চলছে, কিন্তু তাতে দিলীপের অংশগ্রহণ নেই। ১৭ মে ‘তিরঙ্গা যাত্রা’ কর্মসূচিতেও তাঁর নাম নেই। কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা যখন রাজ্য নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে ব্যস্ত, তখনও দিলীপ ঘোষ ডাক পাননি।
দলের একাংশ বলছে, দিলীপের ‘বানপ্রস্থ’ কি পরিকল্পিত? এক বিজেপি সাংসদের কথায়, “যেভাবে সম্মান বজায় রেখে আডবাণীজিকে সরানো হয়েছিল, দিলীপদার ক্ষেত্রেও হয়তো সেই পথই অনুসরণ করা হচ্ছে।”
তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও রাজ্য নেতৃত্ব এ নিয়ে মুখ খোলেনি। মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের মন্তব্য কূটনৈতিক: “দিলীপ ঘোষ, দিলীপ ঘোষের জায়গায়। আডবাণীজি তাঁর জায়গায়। তুলনা টানার আগে অনেক কিছু ভাবা উচিত।”
নিজে অবশ্য নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে দিলীপ ঘোষ বলছেন, “বানপ্রস্থে এক দিন সকলকেই যেতে হয়। আমাকেও যেতে হবে। কিন্তু কবে যেতে হবে, সেটা আমি বা কেউই ঠিক করব না। ভবিষ্যৎই বলবে।”
তবে কি বঙ্গ বিজেপিতে শুরু হয়ে গেল ‘আডবাণী পর্ব—অধ্যায় দিলীপ’?